রোববারের ছোটো গল্প

রচনা – পলাশ দাস


একটা লোক রাতের অন্ধকারে একা হাই ওয়ে ধরে বাড়ি ফিরছিল। হটাৎ পেছনে চিৎকার শুনে ঘুরে দাঁড়ায়, একটি মেয়ের লাশ পড়ে রাস্তার পাশে|গাড়ি ধাক্কা মেরে পালিয়েছে|
কৌতুহলী হয়ে লোকটা এগিয়ে গেল সেই দিকে। কি যেন ঝিলিক দিয়ে উঠলো। গিয়ে দেখল এক তরুনী মেয়ের লাশ পড়ে আছে। সে ভয় পেলেও ঠিকই দেখলো মেয়েটির ডান হাতের মধ্যম আঙুলে একটি হীরার আঙটি জ্বল জ্বল করছে। একটু ইতস্তত করে সে রেখে লাশের আঙুল থেকে আঙটিটা খোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু আঙুল ফুলে ওঠায় কিছুতেই ওটা খুললো না। লোকটা তখন তার পকেট থেকে একটি ছুড়ি বের করলো। তারপর সেই ছুড়ি দিয়ে পুচিয়ে পুচিয়ে লাশের আঙুলটা কেটে ফেলল।
ঠিক তখনই রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে কাছাকছি কোথাও একটা পেঁচা ডেকে উঠলো। লোকটা প্রচন্ড ভয় পেয়ে ঐ আঙুল সহ আঙটি পকেটে পুরে ছোটা শুরু করলো। এক ছুটে বাড়িতে এসে কাউকে কিছু না বলে সে ঐ রাতেই চুপে চুপে আঙুল থেকে আঙটি ছাড়ালো। তারপর আঙটিটা লুকিয়ে রেখে আঙুলটা পুঁতে ফেলল মাটিতে।
এরপর অনেক দিন কেটে গেছে। লোকটা সেই মেয়েটির কথা প্রায় ভুলে গেছে। এক অমাবস্যা রাতে সে তখন বাড়িতে একা। চারিদিকে শুনশান নিরবতা। হঠাত্ বাইরে দরজার কড়া নড়ে উঠলো – খট্ খট্ খট্ খট্। সে একটু বিরক্তি নিয়ে গিয়ে দরজা খুললো। দেখলো দরজার সামনে শাদা শাড়ি পড়ে এক তরুনী দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় ঘোমটা দেয়া থাকলেও তাতে তার রূপ ঢাকা পড়ছে না এতটুকু। লোকটা গদ গদ হয়ে প্রশ্ন করলো – কি ব্যাপার ? কাকে চান? তরুনী কেমন খসখসে গলায় বলল – ভাই আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। যাবো আপনার বাড়ির কাছে গাড়ি বিগড়েছে|ঝড় বৃষ্টিও হচ্ছে আমাকে যদি আজ একটু আশ্রয় দিতেন,ড্রাইভার মেকানিক এনে গাড়ি ঠিক করলেই চলে যাবে|
লোকটা প্রথমে একটু ইতস্তত করলো কারন বাড়িতে সে একা, তাও মাতাল, চাকর গেছে মদ আনতে, এদিকে এমন সুন্দরী মেয়ে।পরে সে বলল – আসুন আসুন, কোন চিন্তা নেই। সব ব্যবস্থা হবে। সে মেয়েটিকে বসতে দিয়ে জল এনে দিলো|গল্প শুরু হলো|আলাপ জমে উঠলো|এদিকে কারেন্ট ও গেছে|বেশ একটা মায়াবী পরিবেশ|দুজনে নিজের জীবনের অনেক কথা একে অপরকে শেয়ার করে|
কিছুক্ষন পর লোকটা খাবার নিয়ে এল। মেয়েটি খাবারের থালা টেনে নিয়ে খাবার খেতে লাগলো। লোকটা তখন অন্যমনস্ক, । কোথায় যেনো সে আগে দেখেছে মেয়েটিকে|হঠাত্ সে চমকে উঠলো। দেখলো মেয়েটি যে হাত দিয়ে খাবার মাখাচ্ছে সে হাতে চারটি আঙুল। মধ্যমা আঙুলটা যেখানে থাকার কথা সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। লোকটির আত্মা কেঁপে উঠলো। সে ভয় পাওয়া গলায় জানতে চাইলো – আপনার হাতের আঙুলের কি হয়েছে? কে আপনি? কি চাই আপনার?
দমকা হওয়ায় খসে পড়ে ওড়না|সেই মুখ|হাসতে হাসতে মেয়েটা উঠে এসে লোকটার সামনে দাঁড়ায়|নিজের জিনিস ফেরত চায়|গলা চেপে ধরে লোকটার| তারপর আর্তনাদ করে জ্ঞান হারায় লোকটা|ঝোড়ো হাওয়ায় নিভে যায় মোমবাতি|
কিছুক্ষণ পর, চাকর আসে, পুলিশ ডাকে তারপর পর লোকটির ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হয় ঘর থেকে|ঘর থেকে উদ্ধার হয় একটি হীরের আংটি পুলিশের তদন্তে উঠে আসে অনেক তথ্য|আংটিটা যে মেয়েটির তার লাশ কিছুদিন আগেই উদ্ধার হয়েছিলো হাইওয়ে থেকে|একটা আঙ্গুল কাটা ছিলো|মেয়েটির প্রেমিক তাকে এই আংটি দিয়ে প্রপোজ করেছিলো|এটা ছিলো তার জীবনের শ্রেষ্ট উপহার|সে কথা দিয়েছিলো এটা কোনো দিনও কাছ ছাড়া করবেনা সারাজীবনে নিজের বুকে আগলে রাখবে|

পলাশ দাস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here