আরো একটি দীপান্বিতা অমাবস্যা, আরো একটি দীপাবলী উদযাপন করতে চলেছি আমরা, সবাই|সারা বছরেই অপেক্ষা করি এই দিনটার জন্যে, আজ এই বিশেষ দিনে জ্যোতিষ নিয়ে কিছু বলবোনা বা অমাবস্যা এবং তন্ত্র নিয়ে কিছু বলবোনা তা আবার হয় নাকি|

জ্যোতিষটা আমি বরাবরই অঙ্ক কষে করতে ভালোবাসি এবং তাই করি|আগেও বলেছি বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্র গণিত, পদার্থ,বিজ্ঞান, রসায়ন জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক গাণিতিক সংমিশ্রণ যা আমাদের জীবনে গ্রহ নক্ষত্রর সার্বিক প্রভাব নির্ণয় করে ও তার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যত নির্দেশ করে|এ কোনো ম্যাজিক নয় বা অলৌকিক বিষয় নয়|বিজ্ঞান ও জ্যোতিষ শাস্ত্রের মধ্যে তাই কোনো শত্রুতা নেই বরং বন্ধুত্ব আছে|দীর্ঘ তিন দশকের বেশি পেশাদার জ্যোতিষ জীবনে আমি দর্শনকে আঁকড়ে ধরে এগিয়েছি, লক্ষ লক্ষ ক্লাইন্ট দেখেছি|তাদের সাফল্য আমার সাফল্য|

ভুললে চলবে না আগে জ্যোতিষ শাস্ত্র তারপর জ্যোতির্বিজ্ঞান এরা একই কয়েনের এপিঠ আর ওপিঠ, একে অন্যের পরিপূরক|তাই স্বাভাবিক ভাবেই মহাজাগতিক কিছু ঘটনা জ্যোতিষ শাস্ত্র কে প্রভাবিত করে|আর এখানেই জ্যোতিষের সাথে যুক্ত হচ্ছে আধ্যাত্বিকতা কারন আমাদের শাস্ত্রে প্রতিটি মহাজাগতিক ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছে শাস্ত্রীয় এবং পৌরাণিক ব্যাখ্যা|এমনই একটি মহাজাগতিক ঘটনা হলো অমাবস্যা|

জ্যোতির্বিদ্যা অনুসারে, অমাবস্যা হচ্ছে চন্দ্রকলার প্রথম ধাপ। এটি মূলত সেই সময় যখন চাঁদ ও সূর্য একই বরাবর থাকে|ফলে, পৃথিবী থেকে চাঁদকে তার কক্ষপথে দেখা যায় না|শাস্ত্র মতে এই অমাবস্যা প্রভাবিত করে আমাদের জীবনকে|

আবার জ্যোতিষ শাস্ত্রে চন্দ্র হচ্ছে মন, মানসিকতা এবং মাতার কারক গ্রহ তাই স্বাভাবিক ভাবেই   চন্দ্রর গুরুত্ব আমাদের জীবনে অপরিসীম|অমাবস্যা তাই সরাসরি আমাদের জীবনের সাথে সার্বিক ভাবে গভীর সম্পর্ক যুক্ত|

প্রাচীন কাল থেকেই তন্ত্র সাধনার শ্রেষ্ট সময় হিসেবে সমাদৃত দীপান্বিতা অমাবস্যা|এখানে আগে তন্ত্র সম্পর্কে একটা ক্লিয়ার এবং বেসিক জ্ঞান থাকা দরকার, তন্ত্র মূলত বেদের শেষাংস থেকে সৃষ্টি যাকে আগম বলে|তাই তন্ত্র শাস্ত্রের আরেক নাম আগম শাস্ত্র|এই কারনেই অনেক তান্ত্রিক নিজেকে আগমবাগীশ হিসেবেও পরিচয় দেন, এর অর্থ তন্ত্র শাস্ত্রে পারদর্শী|শুধু ভারতীয় বা হিন্দুদের মধ্যে নয় জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্ম কেও প্রভাবিত করেছিলো তন্ত্রবিদ্যা|

সহজ করে সংক্ষেপে বলা যায় তন্ত্রের দৃষ্টিতে শরীর প্রধান নিমিত্ত, তন বা তনু থেকে তন্ত্র শাস্ত্রের উৎপত্তি শরীর ছাড়া চেতনার উচ্চস্তরে পৌঁছানো যায় না। এজন্য তন্ত্রের গূঢ়ার্থ নিজ ‘তন’ বা দেহের মাধ্যমে আত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন ও নিজ দেহে লুকিয়ে থাকা বা সুপ্ত অবস্থায় থাকা কুন্ডলিনি শক্তির পূর্ণ জাগরণ|এই অসাধ্য সাধন করতে পারলেই জগতের বহু শক্তি সাধকের নিয়ন্ত্রণে আসে|বাইরে থেকে এই শক্তির প্রয়োগ
ম্যাজিকের মত মনে হলেও তা আসলে শাস্ত্র নির্ভর এবং হাজার হাজার বছরের গবেষণার ফসল|
জ্যোতিষ এবং তন্ত্রের জগতে অমাবস্যা নিঃসন্দেহে একটি বড়ো ইভেন্ট তাই বিশেষ পূজা, শাস্ত্রীয় মন্ত্র উচ্চারণ ও যজ্ঞ আহুতির দ্বারা আমরা এই অমাবস্যা পালন করে থাকি|

আপাতত এটুকুই থাক তবে তন্ত্র, অমাবস্যা, জ্যোতিষ এই সবের আধ্যাত্মিক ও বিজ্ঞানসম্মত সম্পর্ক অতি জটিল ও বিশাল একটি বিষয় যা নিয়ে আরো বিস্তৃত আলোচনা প্রয়োজন|
লিখবো, বলবো, তবে আগামী কোনো সময়ে|আপাতত আবার এই দিনটায় ফেরা যাক,
আজ 4 নভেম্বর  2021 এমনই এক অমাবস্যা তিথি, আজ সকল রীতি নীতি মেনে নিষ্ঠা সহকারে আমার গৃহ মন্দিরে, বিশেষ পুজো ও হোম যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে|সব কিছুই হবে স্বাস্থ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে |আমার সকল শুভানূধ্যায়ী, ক্লাইন্ট এবিং ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি প্রতিবারের মতো এবারও কাম্য|আসুন, সঙ্গে থাকুন|আপনাদের সবাইকে আমার ও আমার পরিবারের তরফ থেকে জানাই দীপাবলীর অসংখ্য শুভেচ্ছা|আনন্দে থাকুন|আনন্দ হি কেবলম|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here